জীবন পরিক্রমা

তারিক মো: মোরশেদ (নাসিম): দাঁড়াও পথিক! যাচ্ছো কোথায়! শৈশব কি তোমার মনে আছে! হয়তোবা অস্পষ্ট! সুখের না দু:খের নাকি আনন্দের! এর রেশ আজওকি বয়ে বেড়ায়! হয়তোবা খুব সুখের স্মৃতি বা খুব দু:খের স্মৃতি, ভেবে ভেবে কি আনন্দে গদগদ! নাকি দুখে ম্রিয়মান! স্মৃতির পাতা উল্টোতে একাকী শ্রেষ্ঠ সময় গুলোতে একেবার ডুব দিয়ে ঢের সময় পার করে দেয়া যায়। কৈশরের কথা কি মনে পড়ছে? গলার স্বর কখন পরিবর্তন হয়েছে। কে কি বলতো! কেও বলেছে বেটা মানুষ হয়ে যাচ্ছিস! মুখে কিছু দাঁড়ি উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে এবং গোঁপ আসি আসি করছে আরও কতকি শারিরীকি পরিবর্তন খুঁটে খুটে দেখা। দেখতে দেখতে যৌবনে পৌঁছে গেলাম, কি উম্মাদনা, কি অশররী শক্তি ডর ভয় নেই, জীবনে অনেক গতি চলে এলো এবং অনেক বন্ধু বান্ধব। সব মিলে নিজেকে অনেক কিছু জানতা বলে মনে হচ্ছে, এরপর পরিণত বয়সে উপনীত হলাম-চল্লিশ বয়সে কিছুটা জীবনকে উপলব্দি করতে শুরু করলাম এবং পঞ্চাশে উপনীত হয়ে জীবনকে গভীরভাবে উপলব্দি করার তাগিদ অনুভব করলাম। আজ উপলব্দি করে বেশ পুলকিত এবং নিজেকে একটা থ্রিলিং ষ্টার মনে হচ্ছে।
জীবনটা আসলে এক এক পা করে হাজার পা ফেলার জন্য এগিয়ে যাওয়া এবং এ এক চলমান প্রক্রিয়া সময়ের কাছে আর নিয়তির কাছে সমর্পণ করা ছাড়া আর কি! শৈশবের বন্ধুদের নিয়ে কত স্মৃতি ভীড় করছে স্কুল থেকে ফিরে কখন মাঠে খেলতে যাবো বন্ধুদের সাথে, এ এক বাঁধ ভাঙা জোয়ার যেতেই হবে, আর যাবার পর আমার পৃথিবীতে চলে এসেছি যা ইচ্ছে বলা যায়, করা যায়-বাড়ীর পিছনটা মস্তবড় ধানক্ষেত, কখনও হাঁটুজল এবং ধানক্ষেতে শীষ আসছে এরই মাঝে ঘুরে বেড়ানো,

এরই মাঝে ফড়িং ধরে বেড়ানো এবং কৌটায় ফড়িং গুলোকে আবদ্ধ করা, এরপর কয়টা ফড়িং ধরা হলো তা গুনার পালা। কোমর বা বুক সমান পানি বরসিতে কৈ মাছ ধরার হিড়িক, অনেক পাড়া প্রতিবেশী ধরছে দেখছি এতেই দিন পার। রাতে কোচ আর টর্চ দিয়ে মাছ মারার হিড়িক, কত গল্প সকালে শুনি কেওবা বড়মাছ কোচ দিয়ে ধরে রাখতে পারে নাই। কেওবা সাপে কাঁটার গল্প করছে কেওবা ভূতের গল্প করছে গা হিম হয়ে যায় এক এক গল্প শুনে, পরিনত বয়সে এসে মনে হয় ভূতের গল্প গুলো বাড়িয়ে বলে লোকে। এ জানার যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। আমাদের বাড়ি থেকে দক্ষিণ দিকে বিশাল এক হিন্দু বাড়ি নাম তার পন্ডিত বাড়ী, ঐ বাড়ির সামনে হিন্দুদের শশ্মান আর তা থেকে নাকি গভীর রাতে দুইটা ধবধবে সাদা মাথাবিহীন সুঠাম দেহী অশ^ কট কট ঘুরার শব্দ করে দৌড়ে বেড়ায় এই দৃশ্য দেখার জন্য বাড়ীর ছাদে রাত কাঁটিয়েছি এবং শীতের রাতে কাঁথা নিয়ে মুড়ি দিয়ে অনেক রাত জেগেছি কিন্তু ধবল ঘোড়া দ্বয়ের দেখা পাই নাই। মা অনেকবার বড় ভাইকে পিছন দিক থেকে ভূতে আক্রমন করেছে এমন গল্প বলতে শুনেছি তখন বিদ্যুৎ বাড়ীতে আসেনি সন্ধ্যার সময় কেরোসিন আনার জন্য দত্তের হাটে যায় এবং ফেরার পথে পন্ডিত বাড়ির শ^শানের কাছাকাছি এলে পিছন দিক থেকে ঘাড়কে এমনভাবে ধরলে নড়া চড়ার সুযোগ রইলো না শুধু রাগ হয়ে বলতে লাগলো কে কে ছাড় কিন্তু ছাড়ে না তারপর কিছু রিক্সা এসে পড়ায় ছেড়ে দিল কিন্তু পিছনে অনেক ঁেখাজা খুঁজি করে কিছুই পাওয়া গেল না। এরপর কত পুরানো ভূতের কাহিনী মা থেকে গুনেছি নানুুর বাড়ীর
গল্প করতো অবসর সময়ে, মামা মারা গেল কিভাবে সেই ঘটনা, সে এক অদ্ভুত কাহিনী। প্রচুর সাহসী টগবগে যুবক এক বার নারিকেল গাছে উঠে দেখা পেল দুটি বিশধর সাপের এবং গলাটিপে দুটি সাপকে মেরে গাছ থেকে যথারীতি নেমে আসেন। এ সাহস এবং বীরত্বের গল্প মা বহুবার বলেছে। মামা শুধু সাহসীই ছিলেন না ভালো বাঁশি বাজাতেন। একবার বাঁশি বাজিয়ে ফেরার পথে গভীর জঙ্গলের কাছে আসামাত্র দুদিক থেকে দুই বাঘ মামাকে আক্রমণ করে, মামা বাঁশি দিয়ে সজোরে আঘাত করে দৌড় দিয়ে বাড়ী চলে আসে। এরপরই তার জ¦র হলো , ঐ জ¦রেই প্রলাপ বকতে বকতে সে মারা গেল। মায়ের চোখে পানি গড়িয়ে পড়ে। পরিবেশ বেশ ভারী হয়ে উঠে। মন খারাপ করে স্থান ত্যাগ করতাম। এরপর নানা এক রাতে কোন এক জায়গায় রওয়ানা হয়েছেন, উনি কিছুদূর যাওয়ার পর গভীর রাতে দেখে শুধু মহিষের মাথা মাটি খুঁড়ছে। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখে রাস্তায় সাদা লাশ শুয়ে আছে, এর কিছুদূর যাওয়ার পর দেখে সাদা বিড়াল মিউ মিউ করে শুধু গায়ের কাছে আসছে এভাবে অনেক অদ্ভূত ঘটনা অতিক্রম করে সকালে বাড়ি এল। অসুস্থ হয়ে পড়ল কিছু দিনের মধ্যে মারা গেল। ভূতের জন্য আরো কত বিধি নিষেধ মুরুব্বিরা বলল মাছ ধরে গভীর রাতে আসার সময় মাছ কেহ চাইলে মাছ দিতে নাই অর্থ্যাৎ কোন লেনদেন করা যাবে না। তাহলে ভূতের খপ্পরে পড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা এমন অনেক গল্প শুনেছি মাছ ধরতে ধরতে গভীর রাতে অনেক দূরে চলে গেছে নেশায় একসময় ভূত ঘাড় মটকে পানিতে ডুবিয়ে চুবিয়ে মেরে ফেলেছে। এত কিছু শুনে আমার রাতে চলাচল রোধ করা যায়নি। রাতে বাঁশ বাগানে যাওয়া পেচা গদগদ চোখে তাকিয়ে থাকে আর পেচাকে ঢিল দেওয়া আর এলোমেলো ঝড়ো হাওয়ায় বাঁশ বাগানো ক্যাঁচ শব্দ হয়। তুলা গাছ থেকে তুলা উঠতে থাকার আর ধরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা আমাকে উৎসাহিত করত। পুকুর পাড়ে রিম ঝিম বৃষ্টি দমকা হাওয়া খুব ভোর বা সন্ধ্যা মুখে এসে একরাশ ধাক্কা এ এক সাংঘাতিক অনুভূতি যা আজও ভূলতে পারি না। দমকা হাওয়ায় আমপড়া ও আম কুড়াতে সেকি অদ্ভূত স্মৃতি, কখনও আছাড় খেয়ে পড়ে হাসির রো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *